Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ইঁদুর ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যকরী উপায়

প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ইঁদুর ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যকরী উপায়
ড. হাবিবুর রহমান
বিশ্বের অনিষ্টকর প্রাণীদের মাঝে ইঁদুরের অবস্থান সর্বাগ্রে। ইঁদুর গরীব ধনী চিনে না, তাই এমন কোনো স্থান নেই যেখানে ইঁদুরের যন্ত্রণা নেই। নতুন, পুরনো, মূল্যবান কিংবা সস্তা যাই হোক সব জিনিসই অচল করে দেয় ইঁদুর। সবচেয়ে বড় কথা একটি ইঁদুর মানুষের জন্য প্রায় ৬০ ধরণের রোগের জীবাণু বয়ে বেড়ায়। খাবার আর শখের পোশাক কাটাকাটিতে ওস্তাদ এ প্রাণিটির হাত থেকে রক্ষা পেতে কে না চায়।
প্রতিরোধ/প্রতিবন্ধক ব্যবস্থাপনা একটি পরিবেশ বান্ধব ইঁদুর দমন পদ্ধতি। সীমিত পরিসরে ফসলের জমিকে ইঁদুরজাতীয় বালাই থেকে  রক্ষা করার একটি কার্যকরী পদ্ধতি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ধান ক্ষেতে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে এটি বেশ সফল প্রমাণিত হয়েছে। অপরদিকে, ইঁদুরকে তাড়ানোর বা দূরে রাখার নানারকম কৌশল রয়েছে যার মাধ্যমে গুদামজাত ফসল এবং বসতবাড়ির ব্যবহার্য আসবাবপত্র/দ্রব্যাদি সহজেই রক্ষা করা সম্ভব। ইঁদুর প্রতিরোধের কলাকৌশলের মধ্যে পরিবেশগত, উদ্ভিজ্জ, রাসায়নিক ও জৈবিক বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যকরী উপায় ব্যবহার করে প্রতিরোধ করা যায়। এখানে পরিবেশগত ও উদ্ভিজ্জ প্রতিরোধের প্রযুক্তি বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো-
পরিবেশগত প্রতিরোধ (ঊপড়ষড়মরপধষ নধৎৎরবৎ)
চাষাবাদ পদ্ধতি (ঈঁষঃঁৎধষ পড়হঃৎড়ষ) : জমি তৈরির সময় ন্যূনতম ১৮ ইঞ্চি গভীর করে চাষ দিয়ে, আইল ছেঁটে ছোট বা চিকন রেখে, আইলের সংখ্যা কমিয়ে, নিয়মিত আগাছা পরিস্কার করে, ইঁদুর-সৃষ্ট গর্ত দূর করে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সাধারণত ৬ ইঞ্চি উচ্চতা ও ৮ ইঞ্চি প্রশস্ততা বিশিষ্ট আইল তৈরি করলে ইঁদুর আইলে গর্ত করে বসবাস করতে পারে না। ইঁদুর আক্রমণপ্রবণ অঞ্চলে ‘শূন্য কর্ষণ (তবৎড় ঃরষষধমব)’ কিংবা ন্যূনতম কর্ষণ (গরহরসঁস ঃরষষধমব)’পরিহার করতে হবে। আখ লম্বা হয়ে বাতাসে ঢলে পড়লে ইঁদুরের উপদ্রব বাড়ে। তাই আখ বা-ল বা গোছা করে বেঁধে ঠেকনা দিয়ে রাখতে হবে। উল্লেখ্য যে, আহার, বাসস্থান ও পানি এ তিনের যে কোন একটির অভাব হলে ইঁদুর স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়।
শস্যাবর্তন পদ্ধতি বা শস্যপর্যায় (ঈৎড়ঢ় ৎড়ঃধঃরড়হ) : গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে ধান-আখ-গম শস্য-চক্র ইঁদুরের বিস্তার ও বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক। কারণ ধান-গম শস্য ব্যবস্থায় ধান কর্তন শেষে ইঁদুর পার্শ্ববর্তী আখ ক্ষেতে গমন করে এবং আখ কর্তন শেষ হলে পুনরায় গম ক্ষেতে ফিরে এসে বাধাহীন জীবনচক্র চালিয়ে যায়। তাই ভিন্ন শস্য-পর্যায় অবলম্বন করলে ইঁদুরের স্বাভাবিক বিস্তার ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। ইঁদুর শুকনোর চেয়ে ভেজা মাটি অধিক পছন্দ করে বিধায় শস্য বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়ায় ধান কিংবা গমের স্থলে অন্য কোন উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল যোগ করলে ইঁদুরের আক্রমণ হ্রাস পায়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা (ঈষবধহষরহবংং/ঐুমরবহব) : বসত-বাড়ি, রান্নাঘর, ভা-ার, খাদ্য গুদাম, বাড়ির আঙ্গিনা, পুকুর পাড়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, নদীর পাড় ও জমির চারপাশের ময়লা-আবর্জনা, উচ্ছিষ্ট খাবার-দাবার, অবাঞ্ছিত আগাছা ও ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নির্মূল করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইঁদুরের দ্বারা ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। খড়ের গাদা মাটি হতে ১৮-২৪ ইঞ্চি উঁচুতে মাচা তৈরি করে স্থাপন করলে ইঁদুরের আক্রমণের মাত্রা হ্রাস পায়। মুরগির বিষ্ঠা মুরগির শেড থেকে দূরে রাখলে খামারে ইঁদুরের উপদ্রব কমে যায়।
শস্যসূচি (ঈৎড়ঢ় ংপযবফঁষরহম) : মাঠে সবাই মিলে একসাথে ফসল রুয়ে, বুনে ও কেটে আনলে দীর্ঘদিন মাঠে খাবার না পেয়ে ইঁদুরের জন্মহার হ্রাস পেলে পরোক্ষভাবে তা ইঁদুর দমনে সহায়ক হবে। কারণ ইঁদুর আগাম বোনা ফসলে আহার্য ও আশ্রয়ের সন্ধানে আগে আক্রমণ করে কিন্তু উক্ত ফসল কর্তন শেষে তদসংলগ্ন অন্য নাবি ফসলে স্থানান্তরিত হয়। তাই বিস্তৃত এলাকায় একই সাথে একই সময়ে পরিপক্ব হওয়া জাত বপন বা রোপণ করলে ইঁদুরের আক্রমণের মাত্রা কমে (ফার্মস এন্ড ফার্মার. ২০২১)।
উদ্ভিজ্জ প্রতিরোধ (ইড়ঃধহরপধষ নধৎৎরবৎ)
পেপারমিন্ট তেল, তেতুল এবং লবঙ্গ : গন্ধের প্রতি ইঁদুর বেশ সংবেদনশীল। ইঁদুরজাতীয় প্রাণী পেপারমিন্ট তেল, তেতুল এবং লবঙ্গ ইত্যাদি দ্রব্যাদির গন্ধ পছন্দ করেনা । এই সকল এক বা একাধিক মিশ্রিত দ্রব্যাদি কিছু তুলার বল অথবা গুঁড়া করে এমন জায়গাগুলিতে রেখে দেওয়া যেখানে ইঁদুরগুলো সাধারণত লুকায়িত থাকে (যেমন খাটের নীচে এবং ঘরের কোনায় কোনায়) (ঐধংধহুুঁধসধহ ্ অষধস,  ২০১৮; হক, ২০০২)।
পুদিনার পাতার ব্যবহার :  ইঁদুর পুদিনার পাতা ও পুদিনার তেল একদম সহ্য করতে পারে না। তাই ইঁদুরকে ঘর থেকে বাইরে রাখতে হলে ঘরের প্রতিটা কোনা ও ইঁদুর থাকার জায়গাগুলোতে পুদিনা পাতা রেখে দিন। বসতবাড়ির আশপাশে যাতে ইঁদুর  ঘোরাঘুরি করতে না পারে এর জন্য বাড়ির চারপাশে পুদিনা গাছ লাগান। ব্যবহার্য জিনিসপত্র ইঁদুর থেকে দূরে রাখতে পুদিনা পাতা বেঁটে লেপে দিয়ে অথবা পুদিনা তেল ব্যবহার করা উত্তম পদ্ধতি (হক, ২০০২)।
গোল মরিচের ব্যবহার : গোলমরিচের গন্ধ ইঁদুর একেবারেই সহ্য করতে পারে না। ইঁদুর মারতে গোল মরিচের জুড়ি নেই। আপনার বাড়ির ইঁদুরের বাসস্থানে গোল মরিচ রেখে দেখুন ইঁদুর মরবেই। গোলমরিচের পানজেন্ট ধরণের ঘ্রাণ অর্থাৎ ঝাঁজপূর্ণ ঘ্রাণ ইঁদুরের ফুসফুসে গেলে শ্বাস নিতে পারে না ইঁদুর। আর এ কারণে খুব সহজেই মারা পড়ে। যে সকল স্থানে ইঁদুরের উপদ্রব বেশি বা ইঁদুরের আবাস রয়েছে মনে করছেন সে সকল স্থানে গোলমরিচ গুঁড়া করে ছড়িয়ে রেখে দিলে ইঁদুর নির্বংশ হবে খুব সহজেই (কযধহ, ১৯৮৪, হক, ২০০২)।
পেঁয়াজের ব্যবহার : পেঁয়াজের উপাদান ইঁদুর হজম করতে পারে না। ইঁদুরের গর্তের মুখে পেঁয়াজ কেটে রেখে দিন আর এতেই কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু ইঁদুর খুব সহজেই পেঁয়াজে কামড় দিয়ে বসে। ইঁদুর যেখানে রয়েছে বলে মনে হয় সে সকল স্থানে পেঁয়াজ টুকরো করে রেখে দিলে কিছুদিনের মধ্যেই ইঁদুর আর দেখা যাবে না।
শুকনো গোবর ব্যবহার : শুনে হাসি আসলেও আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে যে ইঁদুর মারতে শুকনো গোবর খুব কাজের। কোনো ইঁদুর যদি শুকনো গোবর খেয়ে ফেলে তবে তার মৃত্যু ঠেকানো যাবে না (কযধহ, ১৯৮৪)।
তেজপাতার ব্যবহার : তেজপাতা খুবই উপকারী একটি মসলা যা প্রত্যেকের ঘরেই রয়েছে। এই উপকারী মসলাটিও ইঁদুরের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা যায় অনায়াসেই। তেজপাতাকে ইঁদুরেরা নিজেদের খাবার মনে করে। কিন্তু তেজপাতা খাওয়ার পর তারা এটি হজম করতে পারে না একেবারেই। তেজপাতা গুঁড়া করে ছড়িয়ে রাখুন উপদ্রবের স্থানগুলোতে কিছুদিনের মধ্যেই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন।
ইঁদুরের চলাচল প্রতিবন্ধকতার বিভিন্ন কৌশল
ফাঁদ ফসল রোপণ করে বেরিয়ার নির্মাণ : প্রতিটি মৌসুম বেরিয়ার নির্মাণের পরেই এর ভিতরে ফাঁদ ফসল রোপণ করতে হয়। ফাঁদের ভেতরে তিন সপ্তাহ পরে মূল ফসলের চারা রোপণ করতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় ফসলে সকল প্রকার আন্তঃপরিচর্যা সম্পন্ন করতে হয়। বেরিয়ার নির্মাণের উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো এটি পরিবেশগতভাবে ফসলকে রক্ষা করে। কারণ পুরো ফসলটি পলিথিলিনের চাদরে আবৃত হয় এবং পলিথিনটি পর্যাপ্ত উচ্চতায় রাখা হয় (৯০-৯৫ সেমি.)। ১০দ্ধ১০ বর্গমিটার সাইজের একটি ফসলের জমির চারকোনায় বাঁশের খুঁটি পোতা হয়। খুঁটিসহ জমির চারপাশ এক মিটার প্রস্থের একটি পলিথিন সিট দ্বারা এমনভাবে আবৃত করা হয় যেন ৫-১০ সেমি পলিথিন মাটির গভীরে থাকে। লাইভ-মাল্টিপল-ক্যাপচারের খাঁচা ট্র্যাপগুলো (২৪০দ্ধ১৫০দ্ধ১৫০ মিমি) প্রতিটি কোণ থেকে প্রতি ২.৫ মি. অন্তর অন্তর স্থাপন করা হয়। প্রতি পার্শ্বে দুটি করে চারপাশে মোট আটটি করে ট্রাপ স্থাপন করা হয়। ট্র্যাপগুলি পলিথিন শিটের তৈরি গর্তের মুখোমুখি শক্তকরে স্থাপন করা হয় (গঁষঁহমঁ বঃ ধষ., ২০২০)। ফলে ইঁদুরগুলো লাইভ-মাল্টিপল-ক্যাপচারের খাঁচায় আটকা পড়ে ভেতরের ফসলকে রক্ষা করবে।
মাল্টি-ক্যাপচার ট্র্যাপগুলো থেকে সকালে ইদুরগুলি সাফ করা হয় এবং পুনরায় ফাঁদ স্থাপন করা। এভাবে ইঁদুর নিধন সমস্ত ফসল মৌসুম ধরে চলে (গঁষঁহমঁ বঃ ধষ., ২০২০)।
প্রবেশ প্রতিবন্ধকতা (ঊহঃৎু নধৎৎরবৎ/জধঃ ঢ়ৎড়ড়ভরহম) : দালানকোঠা, ঘরবাড়ি ও খাদ্যগুদামে দরজা-জানালা, গ্রিল, পাইপের খোলা মুখ ও অন্যান্য ইঁদুর প্রবেশ্য স্থানের ফাঁক-ফোকরে ধাতব পাত বা তারজালি লাগিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ইঁদুরের অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং চলাচল প্রতিহত করা সম্ভব। পানির ট্যাপের ছিদ্র, ভাঙা  ড্রেন সর্বদা মেরামত করতে হবে যাতে ইঁদুরের জন্য পানি সহজলভ্য না হয়। ঘরে ড্রাম, মটকা, টিনের পাত্র ইত্যাদিতে ধান, গম ও অন্যান্য শস্য-সামগ্রী সংরক্ষণ করলে ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। সম্ভব হলে শস্যাধারের মেঝে পাকা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
ধাতব বা টিনের পাত দ্বারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি : সাধারণত গেছো ইঁদুর ফল গাছের ক্ষতি করে থকে। এ ক্ষেত্রে টিনের পাত দ্বারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ইঁদুর আক্রমণ রোধ করা যায়। টিনের পাত লাগানোর পূর্বে ফলগাছকে ইঁদুরমুক্ত করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় মরা ডালপালা কেটে পরিষ্কার করতে হবে। অন্য গাছের সাথে লেগে থাকা ডালপালা ছেটে দিতে হবে যেন গাছ থেকে গাছের দূরত্ব দুই মিটার হয়। নারিকেল, তাল, সুপারিসহ অন্যান্য ফল উৎপাদনকারী গাছের গোড়া থেকে দুই মিটার উপরে কা-ের চারিদিকে ৫০-৬০ সেমি প্রশস্ত টিনের পাত শক্ত করে আঁটকিয়ে দিতে হয়। ফলে ইঁদুর গাছের গোড়া থেকে উপরের দিকে উঠতে না পারে (কযধহ, ১৯৮৪)। পদ্ধতিটি অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী এবং লাভজনক। অরাসায়নিক হওয়ায় পরিবেশ থাকে নির্মল ও দূষণমুক্ত। এর বাড়তি সুবিধা হলে বেয়ে ওঠা পোকা (যেমনঃ রাইনোসেরোস বিটল) থেকেও ফলদবৃক্ষকে রক্ষা করে থাকে।

লেখক : অধ্যাপক, কীটতত্ত্ব বিভাগ, বশেমুরকৃবি, মোবাইল : ০১৭১৫২৯৬৪৫৬, ই-মেইল : hrahman@bsmrau.edu.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon